December 23, 2024
Chicago 12, Melborne City, USA
BUET

বুয়েটের গবেষণাগার উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকা টাকার প্রকল্প

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষণাগারগুলোর উন্নয়নের জন্য একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সংশোধিত একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। বর্তমানে প্রস্তাবনাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তারা এটি যাচাই-বাছাই শেষে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর কথা রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পের কাজ শুরু করবে দেশের শীর্ষ প্রকৌশল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান গবেষণাগারসমূহের অধিকতর উন্নয়ন ও ভৌত সুবিধাদি সংস্কার’—শীর্ষক এ প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫ শত ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা থাকলেও এখনও অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে বুয়েটের এ প্রকল্পটি। তবে বুয়েটের এ প্রকল্প সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। বুয়েটের পক্ষ থেকে প্রকল্পটি প্রস্তাব আকারে ইউজিসিতে পাঠানো হয় ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর। এরপর একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রকল্পটি বিস্তারিত যাচাই-বাছাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় কমিশন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ শুরুতে এ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৫ শত ৬৬ কোটি ১৪ লাখ বরাদ্দ চেয়েছিল। পরবর্তীতে সংশোধনীতে এ ব্যয় কমে বর্তমান ব্যয়ের সমান হয়। প্রকল্পটি সংশোধনকালে তখন অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব বিবেচনায় কিছু কাটছাঁট করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। জিওবি ফান্ড থেকে আসা এ অর্থের ১৫ শতাংশ আবর্তন ব্যয় ধরা হয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য খাতে। প্রকল্পের বাকী ৮৫ শতাংশ অর্থই ব্যয় করা হবে বুয়েটের বিদ্যমান গবেষণাগারসমূহের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়, আধুনিকায়ন এবং সংস্কারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উচ্চশিক্ষালয়টির অনেক গবেষণাগারই দীর্ঘদিনের পুরোনো এবং সংস্কারের পাশাপাশি আধুনিকায়ন জরুরি। সেজন্য তারা এ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন। অনুমোদন পেলেই তারা কাজ শুরু করতে পারবেন। এ প্রকল্পে গবেষণাগারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোর উন্নতি করা হবে। এতে ভৌত অবকাঠামোগত কোনো উন্নতির প্রস্তাব রাখা হয়নি।

প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের বাইরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, ক্যাম্পাস সজ্জিতকরণসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে—বিশ্ববিদ্যালয়টির উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য গৃহীত বুয়েটের প্রকল্পে রয়েছে, উচ্চশিক্ষালয়টির স্নাতকের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত একটি ল্যাবরেটরি স্থাপন। পদার্থবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট উচ্চশিক্ষার নানা বিষয় হাতে কলমে পরীক্ষার সুযোগ ছাড়াও এ ল্যাবে থাকবে পোটেনটিওস্ট্যাট বা গ্যালভানোস্ট্যাট বা ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ওয়ার্কস্টেশন।

উচ্চশিক্ষালয়টির প্রকল্প তালিকায় রয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষাগারের নানান প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কম্পিউটার, বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, অতিথিশালা-০১ সুসজ্জিতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলা এবং দ্বিতীয়তলার বারান্দায় টালি বসানোর মতো ক্যাম্পাসের উন্নয়নমূলক ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও।

এছাড়াও বুয়েটের নতুন প্রকল্পের জন্য কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে গাড়ি রাখার স্থানের উন্নয়ন, ডি-ব্লকের প্রধান সড়কের সংস্কার, বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা সজ্জিতকরণ (মেঝে, ছাদ ও বিভিন্ন দেওয়াল সংস্কার ও কেবিনেট স্থাপন ইত্যাদি), বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষের জন্য ১০টি শব্দ প্রতিরোধী দেওয়াল স্থাপন, ব্যাকড্রপ, বৈদ্যুতিক কাজ এবং অন্যান্য সাজসজ্জার কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার নানা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজের জ্বালানি সক্ষমতাও বাড়াতে চায় দেশের শীর্ষ এ প্রকৌশল শিক্ষালয়টি। সেজন্য বুয়েট দরপত্র আহ্বান করেছে তাদের ২ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রর ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ এবং এসি মিটারিংকে একত্রিত করার ইলেকট্রনিক মডুলার কন্ট্রোল প্যানেল (ইএমসিপি-২) কেনার জন্য। এছাড়াও দরপত্র চাওয়া হয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) কেনার জন্যও। উচ্চশিক্ষালয়টির দরপত্রে জানানো হয়েছে, তাপানুকূল যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে নেওয়া হবে নতুন প্রজন্মের স্প্লিট টাইপ এসি।

এর বাইরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে থাই গ্লাস স্থাপন, বৈদ্যুতিক এবং যান্ত্রিক কাজের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ ফ্লোর কাস্টিং এবং অনুভূমিক ও উল্লম্ব সম্প্রসারণের অবশিষ্ট কাজ। আর এসব কাজে ব্যবহার করতে হবে পরিবেশবান্ধব বোর্ড বক্স। এছাড়াও বুয়েটের এবারের ক্রয়ের তালিকায় রয়েছে কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশও।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁনের কাছে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমাদের বিভিন্ন গবেষণাগারের আধুনিকায়নের জন্যই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে শুধুমাত্র গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ক্রয় করা হবে। এটি করা সম্ভব হলে আমাদের বিভিন্ন ল্যাবের সক্ষমতা এবং কাজের গতি বাড়বে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থীর এবং গবেষকরা আরও বেশি গবেষণা করতে পারবেন।

From- BUET News

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *