এগিয়ে আসছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মুহূর্ত। স্থলপথে রাজধানীর সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল। বেশকিছু মানুষ পর্দার আড়ালে থেকে প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন। তাদের নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের অষ্টম পর্বে আজ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) সাদ্দাম হোসেন
পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞে যুক্ত হয়েছেন অনেক মানুষ। বাংলাদেশীদের পাশাপাশি এর বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন বিদেশীরাও। এ প্রকল্পে তড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন চারজন। যাদের মধ্যে তিনজনই বিদেশী, তারা যথাক্রমে ভারত, মালয়েশিয়া ও চীনের নাগরিক। মূলত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছেন এ বিদেশী নাগরিকরা। আর সেতু কর্তৃপক্ষের তড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন বাংলাদেশের তরুণ সাদ্দাম হোসেন। বজ্রপাত থেকে সেতুর বিদ্যুৎ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, সেতু ও সেতু এলাকার সার্বিক বিদ্যুৎ সংযোগ, সেতুর আলোকসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো দেখভাল করছেন এ প্রকৌশলী।
২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পে সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) হিসেবে যোগ দেন সাদ্দাম হোসেন। প্রথমদিকে সেতুতে ইলেকট্রিক্যাল কাজ খুব একটা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমদিকে আমি আর্থিং বারগুলো চেক করতাম। কাজটি মূলত সেতুকে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য করা। সেতুর প্যারাপেট ওয়ালের ওপর অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ বসানো হয়েছে। নিচতলায়, যেখানে রেলওয়ে ডেক, সেখানে রেলিং আছে, কিছু ধাতব জিনিস আছে। বজ্রপাত হলে এসব ধাতব উপকরণ বিদ্যুতায়িত হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। এ ঝুঁকি দূর করার জন্যই আর্থিং বার দেয়া হয়েছে। সব ধাতব উপাদানের সংযোগ একত্র করে পিয়ারগুলোর মধ্য দিয়ে সেগুলো আমরা মাটি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছি।
প্রথমদিকে যেহেতু ইলেকট্রিক্যাল কাজ কম ছিল, তাই কিছুদিন নদী শাসনের কাজও করেছেন সাদ্দাম হোসেন।
উত্তাল পদ্মায় কাজ করতে গিয়ে অনেক প্রতিকূলতা ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয়েছে পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীদের। এমন একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘একটা প্রশিক্ষণ ছিল মাওয়ায়। কথা ছিল, আমরা কয়েকজন জাজিরা থেকে যোগ দেব। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে নদী পার হতে পারছিলাম না। এদিকে আবার প্রশিক্ষণের নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসছে। বাধ্য হয়ে সেই অবস্থায়ই রওনা হলাম। মাঝ নদীতে এসে দেখি, কুয়াশায় আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমাদের বোটের আশপাশ দিয়ে মাঝে মধ্যেই দ্রুতগতিতে ছুটে যাচ্ছে স্পিডবোটসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান। সেগুলোর আলতো একটু ধাক্কাতেই ঘটতে পারে ভয়ংকর দুর্ঘটনা। তখন দুর্ঘটনা এড়াতে সেলফোনের লাইট জ্বালিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করি আমরা। সেই অবস্থায়ই পদ্মা সেতুর পিয়ারগুলো ধরে ধরে মাওয়ায় পৌঁছাই।’
২৫ জুন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজের কারণে আমাকে ঢাকা থেকে মাঝেমধ্যেই বাসে করে মাওয়া ঘাটে যেতে হতো। প্রায়ই আমি যাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ দেখতাম। ঘাটে গিয়ে সময়মতো ফেরি পাওয়া যাবে কিনা, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ফেরি বন্ধ থাকবে কিনা, এমন নানা শঙ্কা নিয়ে মাওয়া ঘাটে পৌঁছত যাত্রীরা। কখনো চালককে আরো দ্রুতগতিতে বাস চালানোর জন্য চাপ দিত যেন ফেরি ধরতে পারে। এর পরও সবসময় সময়মতো পদ্মা পার হতে পারত না অনেক যাত্রী। কখনো কখনো অপেক্ষার প্রহর অনেক দীর্ঘ হতো। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে মানুষের এ অনিশ্চয়তার অবসান হতে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তরুণ প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন।
From- Bonik Barta News
Share করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
Page Link – bdengineer.com
PageLink- Engineers Job in Bangladesh
1 Comment