আবারো উত্তপ্ত হচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাস। এখানে এখন রাজনীতি মুক্ত অবস্থা বিরাজ করছে। কেউ প্রকাশ্যে কোন রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারবে না। এটা নিষিদ্ধ। শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক ব্যানারে একটি কর্মসূচির আয়োজন করে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীরা।
এদিকে ছাত্রলীগের এই রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। শনিবার রাতে ক্ষুব্ধ শত শত শিক্ষার্থী বুয়েট ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিটি আয়োজনের অনুমতি কীভাবে পেল, সে প্রশ্নের উত্তর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে চান। কিন্তু তখন কোন কর্মকর্তা ও বুুয়েট প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি।
ছাত্রলীগের এই কর্মসূচীর ব্যাপারে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জানান, বিকেল ৫টায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়াতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাবেক নেতারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদদের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্মসূচিটির আয়োজন করতে পারত, কিন্তু ছাত্রলীগ এর আয়োজন করে। যা আমাদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের থাকায় ছাত্রলীগের এ কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক নয়, বরং বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করতে সভা বলে ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করলে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, ছাত্রলীগের ব্যানারে কেন?
শনিবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে সভা চলে রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত। এর আগে সন্ধ্যা ৭টা থেকে বিক্ষোভকারীরা ক্যাফেটেরিয়ার সামনে জড়ো হতে থাকে। এরপর সভা শেষে সাবেক বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতারা বের হলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘আবরারের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘রাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।


সভা শেষে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাল মাহমুদ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম নয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্য দোয়ার প্রোগ্রাম। এসময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলে উঠেন, তাহলে ছাত্রলীগের ব্যানারে কেন? আপনারা বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবেও করতে পারতেন। পরে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এ প্রোগ্রাম করা হয়েছে বলে জানান ছাত্রলীগের নেতারা।
পরে ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তারা বলেন, বুয়েট প্রাঙ্গণে নিরীহ শিক্ষার্থীদের বারবার প্রাণ ঝরেছে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের অপকর্মে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ছাত্রলীগের নৃশংস অত্যাচারে আবরার ফাহাদ নিহত হন। এর প্রতিবাদে বুয়েটের সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও আজ সেমিনার হল বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতাদের আয়োজনে একটি ব্যানার দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এর আগে গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দিপের স্মৃতিফলকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ৮ জুন সাবেকুন নাহার সনির স্মৃতিফলকে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যানার টানানো হয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের বারবার নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়ায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এমন কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা বুয়েটের সব সাধারণ শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং সুস্পষ্ট জবাব আশা করছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরে বাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আদালত এ হত্যার দায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এই ব্যাপারে ছাত্র কল্যাণ পরিচালক (ডি এস ডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, বলা যায়, তারা আমাদের থেকে অনুমতি নিয়েছে, আবার নেয়ওনি।
অনুমতি নেওয়ার সময় জানিয়েছে, তারা সাবেক শিক্ষার্থী, ক্যাম্পাসে পুনর্মিলনী করবে। সে কারণে আমরা অনুমতি দেই। তারা বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারে প্রোগ্রাম করতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। সব মিলিয়ে তিনি সাংবাদিকদের কোন সুস্পস্ট জবাব দিতে পারেননি। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবে বলে জানাগেছে।


প্রেস ব্রিফিং:
রাজনীতি নিষিদ্ধ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মসূচি দেয়ায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার রাত ৯টায় বুয়েট অডিটোরিয়ামের সামনে প্রেস ব্রিফিং করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিকেল ৫টায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া ও আলোচনা সভা করার কথা ছিল। কিন্তু বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগের ব্যানারে কর্মসূচি দেয়ার প্রতিবাদে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা (প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত) ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের প্রশ্নের মুখে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতাকর্মীরা বারবার শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলে চারদিক থেকে প্রতিবাদের ধ্বনি উঠতে থাকে এবং শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করতে থাকেন। তারা জবাবে নেতাকর্মীদের বলেন,
‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আমরা সবাই পালন করতে পারি। আমাদের কতৃপক্ষ আছে, স্যারেরা আছে। ছাত্রলীগের ব্যানারে কেন এই প্রোগ্রাম করা হলো।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা- এই বুয়েটে হবে না’, ‘ছাত্রলীগ- খুনি’, ‘খুনিদের ঠিকানা- এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘আবরার ফাহাদের খুনিদের- বুয়েটে ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর রাত ৯টায় একটি প্রেস ব্রিফিং করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও আজ সেমিনার হল বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতৃবৃন্দদের আয়োজনে একটি ব্যানার দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে ২ জুলাই, ২০২২ তারিখ অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দিপের স্মৃতিফলকে বাংলাদেশ
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ৮ জুন, ২০২২ তারিখ সাবেকুন নাহার সনি-র স্মৃতিফলকে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে ব্যানার টানানো হয়। তারা বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের বারবার নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়ায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এহেন কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা, বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং সুস্পষ্ট জবাব আশা করছি।
From- News, BUET Campus
Share করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
Page Link- Engineers Job in Bangladesh
.
Page Link- Diploma Engineers of Bangladesh