শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের বাধা আমরা তুলে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও বয়সের সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত নয়। যেকোনো ডিসিপ্লিন থেকে যে কেউ এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন ভর্তি হতে পারে, সে ব্যবস্থা থাকা উচিত। ডিপ্লোমা পাস করা শিক্ষার্থীরা যেন শুধুমাত্র ডুয়েটে নয় বরং সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সে ব্যবস্থাও থাকা উচিত।
শনিবার বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) কম্পিউটার কৌশল বিভাগের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘ফিউচার অব এডুকেশন ইন বাংলাদেশ পারস্পেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কারিগরিতে ভর্তির হার শতকরা ৩০ শতাংশ করা এবং ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এটিকে শতকরা ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। এটি অসম্ভব নয়। তবে আমাদের একটা বড় সমস্যা হলো, আমরা মনে করি কারিগরি শিক্ষা কম মেধাবী এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের জন্য। কিন্তু সত্যি হলো কারিগরি শিক্ষায় জোর দিয়েছে বলেই জার্মানির মতো দেশ আজ উন্নত।
দীপু মনি বলেন, ডাক্তারি পাস করে পাবলিক হেলথে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটে এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে করতে দেয়া হয়নি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনার্স ডিগ্রি লাগবে। সারা বিশ্বের মতো আমরাও মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচের কথা বলছি, আবার সব জায়গায় প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করছি। এই প্র্যাকটিসগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
তিনি বলেন, যে পদ্ধতিতে আমরা অনার্স-মাস্টার্স পড়িয়ে পাস করিয়ে দেই, আমরা তার কর্মজগতের চাহিদার কথা ভাবি না। আমরা মনে করি, ডিগ্রি দিয়ে দিয়েছি, এবার সে করে খাক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেও অনেকের চাকরি হচ্ছে না। চাকরিদাতা চাকরি দিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সার্টিফিকেট কোর্স করে এসেছে বা শর্ট ডিপ্লোমা করে এসেছে এমন কাউকে। এখানে চাকরিদাতাকে দোষারোপ করা যাবে না, কারণ তার দক্ষ লোকই লাগবে।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি নিয়ে আমরা গর্বিত। সেই সম্প্রীতির বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যখন বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে, তখন প্রতিবেশী অনেক দেশে অস্থিরতা চলছে। সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আমাদের এখানেও হয়তো অপশক্তি সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিনষ্টে কাজ করছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সবসময় সবকিছুতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজার দরকার নেই, কিন্তু কোথাও কোথাও ষড়যন্ত্রের ঘটনা তো ঘটে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। যা যা ব্যবস্থা নেয়ার আমরা চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে বলব, যা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, প্রত্যেকের ধর্ম চর্চা ও ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু আমাদের সংবিধানে নিশ্চিত করে গেছেন। ঠিক একইভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সদ্যই দেখেছি ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মধ্যে অসহিষ্ণু একটি পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে হয়তো আরও ভিন্ন অনেক কারণ আছে। আমাদের সেই কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। পরমতসহিষ্ণুতার জায়গায় যেতে হবে। কারও ধর্ম চর্চায় আমরা বাধা হব না। ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইইবির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর এবং আইইবির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুজ্জামান।
মূল প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান যেহেতু খুব কম সময়ের মধ্যে পরিবর্তিত হবে তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। শিক্ষার্থীদের আরও নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সেই দক্ষতাটি পরিবর্তিত হলে সঙ্গে সঙ্গে আগের দক্ষতা ভুলে গিয়ে নতুন আরেকটি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি নতুন হওয়ায় এটি এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে হলে আমাদের এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেই হবে।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার এম. হাবিবুর রহমান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইইবির কম্পিউটার কৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. তমিজ উদ্দীন আহমেদ এবং সঞ্চালনা করেন কম্পিউটার কৌশল বিভাগের সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় কুমার নাথ।
From- Online News