ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের বহুমুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা প্রয়োজন। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের সামর্থ্য, দুর্বলতা, আগ্রহ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ পিতা-মাতা তাঁদের সন্তানদের পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কোনো কাজে যুক্ত হতে দিতে চান না।
তাঁরা মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো ফলই তাঁর সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে। সে জন্য তাঁরা সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো স্কুল ও কোচিংয়ে পড়ানোর বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন। তাঁরা চান, তাঁদের সন্তান সারাক্ষণই যেন পাঠ্যবইয়ের মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পিতা-মাতার উদ্দেশ্য সন্তানের মঙ্গল হওয়া। কিন্তু সন্তানের প্রকৃত মঙ্গল হওয়ার চেয়ে বরং অনেক ক্ষেত্রে তা তার জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও এই সন্তানেরা জীবনের বাস্তব শিক্ষা থেকে দূরে সরে পড়ে। তাদের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে যখন তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে, তখন নানা বাধার সম্মুখীন হয়। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তাই ছোটবেলা থেকেই আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সৃজনশীল ও পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কাজে যুক্ত থাকা একান্ত আবশ্যক।
কিশোর বয়স থেকে যৌবনে পদার্পণের সময়টি মানুষের জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময়ে একজন ব্যক্তির সামনে নানা ধরনের সুযোগ ও সম্ভাবনা উপস্থিত হয়। এর মধ্য থেকে তার জন্য সঠিক বিষয়টি বেছে নিতে হয়। আর এই বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তের ওপর তার ভবিষ্যৎ জীবনের গতিপথ নির্ভর করে।
এ জন্য প্রথমেই আমাদের অভিভাবকদের সন্তানের আগ্রহের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সন্তান কী করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বা আনন্দ পায়, সেই বিষয় গভীর মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ করা প্রয়োজন। এতে তার একটি ভবিষ্যতে সাফল্যময় কর্মজীবন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। পিতা-মাতার উচিত তার আগ্রহের বিষয়টিকে মূলভিত্তি ধরে শিক্ষা কার্যক্রম সাজানো।
মনোযোগ ও প্রাধান্য অনুযায়ী সন্তানদের উৎসাহিত করা এবং সুযোগ তৈরি করে দেওয়া পিতা-মাতাদের অবশ্য কর্তব্য। সবাইকে চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী হতে হবে, অভিভাবকদের এই প্রবণতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অহেতুক চাপ ও হতাশার সৃষ্টি করতে পারে। সন্তানদের আগ্রহের বিষয়টিতে পিতা-মাতার আরও বেশি খোলামেলা মনোভাবের হওয়া উচিত।
শিক্ষার্থী যখন পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় থেকে জ্ঞান আহরণ করে, তখন সেটি তার কর্মজীবনে অনেক সহায়ক হয়। কারণ, কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগদক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমে তারা মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এ কার্যক্রমে যুক্ত থাকার মাধ্যমে তাদের যোগাযোগদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সংস্পর্শে আসার ফলে তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটে, যা তার মধ্যে থাকা সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রত্যেক মানুষই একে অপরের থেকে আলাদা। মানুষের মধ্যে এই ভিন্নতাই পৃথিবীকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। কিন্তু বেশির ভাগ সময় আমাদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকেরা বিষয়টি ভুলে যান। অনেক পিতা-মাতা অন্যদের সঙ্গে তাদের সন্তানদের তুলনা করেন। এতে সন্তানদের ওপর অহেতুক চাপ সৃষ্টি হয়।
আমাদের মনে রাখা দরকার, প্রত্যেক মানুষের আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সক্ষমতা রয়েছে। সবার জ্ঞানের কাজের পরিধি এক হবে না, এটাই স্বাভাবিক। সন্তানের এই আলাদা সত্তা ও সক্ষমতাকে আবিষ্কার করে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে স্বাভাবিকভাবে তার বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলেই সে তার ক্ষেত্রে একদিন অবশ্যই সফল হবে। সুতরাং তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আমাদের অবশ্যই সমর্থন ও উৎসাহ জোগানো দরকার। তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত ও প্রয়োজনীয় সবকিছুর জোগান দেওয়া উচিত। এতে শিক্ষার্থীদের সাফল্যময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।
গোলাম মোর্শেদ
ব্যবস্হাপনা পরিচালক এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও
ওয়াল্টন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড।
Let everyone know by sharing.
Page Link – bdengineer.com
Page Link- Engineers Job in Bangladesh