bdengineer.com Blog Engineering সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের পাঠ্য হতে পারে এই সেতু
Engineering Featured University

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের পাঠ্য হতে পারে এই সেতু

সন্দেহ নেই, পদ্মা সেতু আমাদের জন্য বড় অর্জন। এত বড় স্থাপনার সঠিক বাস্তবায়ন নিজেদের সক্ষমতার ওপর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেয়।

স্নাতক পর্যায়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। স্নাতকের শেষের দিকে থিসিস বা প্রজেক্টের কাজ থাকে। তাত্ত্বিক বিষয়ে পদ্মা সেতু থেকে হয়তো তেমন কিছু শেখার নেই। তবে এখানে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন পদ্ধতিকে নতুনভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো পদ্মা সেতুতেই প্রথমবারের মতো সেটা ব্যবহৃত হয়েছে। সেদিক থেকে ভাবলে, পদ্মা সেতু নিয়ে বিভিন্ন থিসিস বা প্রজেক্ট করানো যেতে পারে। এগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কার্যক্রমের বা পাঠ্যসূচির অংশ হতে পারে। শুধু স্নাতক নয়, স্নাতকোত্তর পর্যায়েও এ বিষয়ে কাজ করার সুযোগ আছে বলে মনে করি।


অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী আমৃত্যু পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি যেহেতু ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্য ছিলেন, তাঁর উদ্যোগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা পদ্মা সেতু নিয়ে কাজ করেছেন। কাঠামোগত পদ্ধতি, পাইলিং নিয়ে শিক্ষার্থীরা থিসিস করেছেন।

পদ্মা সেতুতে যেভাবে পাইলিং করা হয়েছে, বাংলাদেশে সেটা একেবারেই নতুন। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীতে এ রকম কাজ তেমন হয়নি৷ এ ছাড়া আমরা জানি যে পদ্মা পৃথিবীর সবচেয়ে খরস্রোতা নদীগুলোর অন্যতম। ফলে পাইল বসানোর সময় স্কাওয়ারিং (বালু বা মাটি সরে গিয়ে গর্ত হয়ে যাওয়া) হয়। সে ক্ষেত্রে ৬০-৬৫ মিটার স্কাওয়ারিং হতে পারে। তখন এই ৬০-৬৫ মিটার কোনো ভার নেবে না। এর নিচের অংশটা ভার নিতে পারবে। তাই এই স্কাওয়ারিং কমানোরও চেষ্টা করা হয়েছে৷ ভার নেওয়ার ক্ষেত্রে মাটির সঙ্গে পাইলের মধ্যে একটা ঘর্ষণ বল কাজ করে। এই বল বৃদ্ধির জন্য গ্রাউটিং করা হয়। এ পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের সিমেন্ট ব্যবহার করে নদীর তলদেশের মাটি শক্ত করা হয়েছে, যেন পাইলের ওজন বহনের ক্ষমতা বেড়ে যায়। এগুলো নিয়ে পুরকৌশলের শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু শেখার আছে।

প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যতে কীভাবে আমরা এই মেগা প্রজেক্টের শিক্ষা ছাত্রদের ভেতর ছড়িয়ে দিতে পারি?

ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশ মেনে আমরা সিলেবাস উন্নীতকরণের কাজ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের একটি ক্যাপস্টোন প্রজেক্ট করতে হবে। স্নাতকের চার বছরের অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে হবে। ফলাফলভিত্তিক শিক্ষার যে পাঠ্যক্রম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনুশীলন করতে শুরু করেছে, এটা তারই অংশ।

পদ্মা সেতু একটি মেগা প্রজেক্ট এবং এ ধরনের বড় প্রজেক্ট থেকে আমরা পুরকৌশলের সব কটি শাখারই ধারণা পাই। এই স্থাপনায় স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ করতে হয়েছে। তাই, ক্যাপস্টোন প্রজেক্ট করার ক্ষেত্রে পুরকৌশলের শিক্ষার্থীরা অনায়াস পদ্মা সেতুকে বেছে নিতে পারে।

কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে তাত্ত্বিকভাবে যতটুকু শিখল, সেটাই তো যথেষ্ট নয়। তাত্ত্বিক পাঠের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কাজের পরিচয় না ঘটলে, বিষয়টি দীর্ঘ পরিসরে মনে রাখাও কঠিন। শিক্ষার্থীদের সেই বাস্তব ধারণা দিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন শিক্ষাসফরের আয়োজন করে। কিছুদিন আগে আমার সুযোগ হয়েছিল এ রকম একটি দলকে নিয়ে কাজ করার। আমরা পুরকৌশল বিভাগের কিছু শিক্ষক ও শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞের ধারণা নিতে সেখানে গিয়েছিলাম।

মূল সেতুতে না যেতে পারলেও সেতুর সংযোগ সড়কগুলোর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা ধারণা পেয়েছেন। সংযোগ সড়ক অংশের কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। শ্রেণিকক্ষে শেখা বিষয়টি যখন একজন ছাত্র বা ছাত্রী চোখের সামনে মিলিয়ে দেখার সুযোগ পান, সেটা সেই শিক্ষার্থীর শেখার ভিত্তিকে আরেও মজবুত করে। আমি আশাবাদী, এক সময় এ ধরনের বড় প্রকল্পে বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন হবে না। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরাই পুরো কাজ করতে সক্ষম হবে।

মো. নাজমুল আলম,

জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, পুরকৌশল বিভাগ,

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ঢাকা

Share করে সবাইকে জানিয়ে দিন।

Page Link – bdengineer.com

PageLink- Engineers Job in Bangladesh

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version