গুগলে চাকরি পেতে জানতে হবে যে বিষয়গুলো
গুগলে চাকরি পাওয়া অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের একটি হচ্ছে গুগলে কাজ করার সুযোগ। এখানে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করলেই বছরে ৭০-৮০ হাজার ডলার বেতন, গুগল এর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন শুরুই হয় ১ লাখ ২০ হাজার ডলার থেকে! যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি বেতন দিয়ে থাকে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতর গুগলের অবস্থান পঞ্চম।
প্রতিবছর সারা পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ লাখ আবেদন আসে গুগলে, সেখান থেকে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার পর চাকরি পান মাত্র ৪ হাজার আবেদনকারী! তাই বলে গুগলে চাকরি পাওয়া আমাদের জন্য আকাশকুসুম কল্পনা, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ থেকে প্রায় প্রতিবছরই ৫-৭ জন ভাগ্যবান সুযোগ পান গুগলে কাজ করার। জেনে নেওয়া যাক কীভাবে আপনি হয়ে উঠবে সেই ভাগ্যবানদের একজন।


গুগলে চাকরি পাওয়ার উপায়ঃ
CGPA মানেই সব নয়
গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাজলো বক বলেন, “প্রচলিত শিক্ষাগত যোগ্যতার গুরুত্ব ধীরে ধীরে কমছে গুগলে। বর্তমানে গুগলে কাজ করেন এমন ১৪ শতাংশ কর্মীর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রিই নেই!”
ভাল CGPA অবশ্যই যেকোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে সহায়তা করে, কিন্তু গুগলে যাচাই করা হয় তোমার কাজের দক্ষতা; তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতা এখানে বড় কোন ভূমিকা রাখে না।
এখানে একটি মজার তথ্য জানিয়ে রাখি, Graduation এর তিন বছরের ভেতর গুগলে আবেদন করতে গেলে তারা তোমার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট চাইবে এবং সেই তথ্যগুলো গুগলের ইলেকট্রনিক রেকর্ডে আজীবন সংরক্ষিত থাকবে, কিন্তু তিন বছরের পর আবেদন করলে ট্রান্সক্রিপ্ট সাধারণত দাখিল করা লাগে না, সেটির তেমন কোন উপযোগিতা থাকে না!
তাই ক্লাসের প্রথম সারি থেকে লাস্ট বেঞ্চের শিক্ষার্থী – দক্ষতা থাকলে গুগলের দরজা সবার জন্যই খোলা। কী কী দক্ষতা প্রয়োজন গুগলে যোগ দেওয়ার জন্য?
প্রযুক্তিগত জ্ঞান
১. কোডিং করতে জানা:
যেকোনো একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কোডিং খুব ভালভাবে শেখা জরুরি। যেমন C++, Java, Python ইত্যাদি।
২. কোডিং এর খুঁটিনাটি যাচাই:
শুধু কোডিং করতে জানাই যথেষ্ট নয়। যে কোডটি তৈরি করেছো সেটির কার্যকারিতা যাচাই করে দেখার দক্ষতা থাকতে হবে। কোডিং এর বাগ খুঁজে বের করা, বিভিন্ন পরীক্ষা চালানো এবং সফটওয়্যার বদলে ফেলার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে।
৩. প্যারালাল প্রোগ্রামিং জানা:
কম্পিউটারে একসাথে কয়েক টন তথ্যের কাজ করার জন্য প্যারালাল প্রোগ্রামিং শেখা খুবই জরুরি।
৩. গণিতের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান:
অ্যাবস্ট্রাক্ট গণিত সম্পর্কে মৌলিক ধারণা থাকতে হবে। এর মাধ্যমে যৌক্তিক কারণ খুঁজে বের করা এবং গণিতের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জিত হয়।
৪. অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে জানা:
বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে। তবে তোমার যে কাজে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে, তার ওপরই জোর দেবে গুগল।
৫. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে জ্ঞান:
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। কারণ বর্তমানে এই ক্ষেত্রটিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা চলছে।
৬. কম্পাইলারস গঠন শেখা:
মানুষের জন্যে উচ্চমানের ভাষা ডিজাইন করার জন্য এটি শেখা প্রয়োজন, যন্ত্রের জন্যে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রোগ্রামের ভাষা পদ্ধতিগতভাবে গঠন করতে কম্পাইলারের গঠন সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হয়।
৭. অ্যালগরিদম এবং ডেটা সোর্স বোঝা:
স্ট্যাকস, ব্যাগস, কিউই-সহ কুইকসোর্ট, মার্জমোর্ট এবং হিপসোর্ট এর মতো সর্টিং অ্যালগোরিদম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
৮. ক্রিপ্টোলজি জানা:
সাইবার নিরাপত্তার জন্য এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
তাহলে কী প্রযুক্তিতে অসাধারণ পারদর্শী না হলে গুগলে আবেদন করা যাবে না? মোটেই না! গুগলে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়াও আরো অনেকরকম গুণাবলীকে মূল্যায়ন করা হয়।
যত দক্ষতা, ততো বেশি সুযোগের হাতছানি!
তোমার Resume যতো বেশি ভারী হবে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ততোই বেড়ে যাবে। গুগলে প্রতিদিন ৩০০০ আবেদন আসে, তাদের সবাইকে ইন্টারভিউতে ডাকা সম্ভব নয়। তাই ছাত্রজীবনে খেলাধুলা, আবৃত্তি, বিতর্ক, ইন্টার্নশিপ, লেখালেখি, অভিনয়, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ইত্যাদিতে যতো বেশি সম্পৃক্ত থাকবে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ততোই বেড়ে যাবে।
৯)নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা
গুগলে বেশিরভাগ কাজই সম্পাদিত হয় ছোট ছোট টিমের মাধ্যমে, তাই তোমার কাঁধেও যেকোনো সময় দায়িত্ব আসতে পারে একটি টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ার।প্রচলিত নেতৃত্বের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সমস্যা সমাধান করার নেতৃত্ব গুণকে গুরুত্ব দেয় গুগল। তাই ছাত্রজীবনে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন, খেলাধুলার টিম, সৃজনশীল কাজ ইত্যাদি যেকোন কিছুতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকলে, পরিচালনা করলে সেটি গুগলে দারুণ গুরুত্ব পায়।
টিমওয়ার্ক
If you want to go fast, go alone. But if you wanto go far, go together.
টিমের সাথে মিলেমিশে কাজ করার মানসিক দক্ষতা গুগলে কাজ করতে গেলে অসম্ভব জরুরি। এই দক্ষতার চর্চা কিন্তু ছোটবেলায় খেলার মাঠ থেকেই শুরু হয়। অনেকে আছে সবসময় নিজেকে সঠিক মনে করে, কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে অহেতুক গোয়ার্তুমি করে- যতো ভাল রেজাল্টই থাকুক না কেন, এরকম মানসিকতার লোক কখনই গুগলে সুযোগ পাবেন না।
From- News